শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ১৮ জানুয়ারী ২০২৪ ০৬ : ৫৩Riya Patra
দেবব্রত ঠাকুর
তোমরা যা দেখাবে, আমাদের তা–ই দেখতে হবে। আমাদের চোখের দু’পাশে ঠুলি পরাবে, আমাদের তা–ই পরতে হবে। তোমরা চাও, আমরা শুধুই সামনে দেখব, আশপাশে আমাদের যেন চোখ না যায়। তোমরাই ঠিক করে দেবে আমরা কী লিখব। সাংবাদিকের স্বাধীন সত্তায় শাসক–তোমরা বিশ্বাস করো না।
স্বাধীনতার প্রথম ছ’দশকে এই পরিস্থিতিতে বোধ হয় সংবাদজীবীদের পড়তে হয়নি। ব্যতিক্রম ছিল সাতের দশকের ওই বছর দুয়েক। তবে তাও তো ছিল শাসকের ঘোষিত দমন–নীতি। কথাটা নতুন করে উঠল রামমন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন ও রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা ঘিরে তোমাদের অতি–সক্রিয়তায়। অতি-তৎপরতায়। এ তো অঘোষিত জরুরি অবস্থা! অঘোষিত, কিন্তু আরোপিত সেন্সরশিপ!
আগামী ২২ জানুয়ারির রামমন্দির উদ্বোধনকে সামনে রেখে প্রায় মাসখানেক আগে অযোধ্যায় আমরা কোনওক্রমে একটি ছোট্ট হোটেলে একটি ঘরের ব্যবস্থা করেছিলাম। পাঁচ দিনের পুরো টাকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দু’দিন আগে গভীর রাতে সেখান থেকে একটা ফোন এল, দুঃখিত, বুকিং ক্যানসেল করা হয়েছে। কারণ নিরাপত্তার কারণে সরকার সমস্ত বুকিং খারিজ করেছে। সব ঘর রিকুইজিশন করেছে। অতএব জলে। আবার এদিক–ওদিক করে অযোধ্যা এলাকার বাইরে আরও একটি ছোট হোটেলে আশ্বাস মিলল। সকালের আশ্বাস সন্ধ্যায় বদলে গেল, দাদা কীভাবে আসবেন! অযোধ্যা–ফৈজাবাদে তো ঢুকতেই পারবেন না! এখানে আসার সব ট্রেন ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৯ থেকে ২২, কোনও ট্রেন অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট বা অযোধ্যা ধাম, কোথাও আসবে না। এমনকী কাছাকাছি অন্য স্টেশনগুলিতেও একই বিধি বলবৎ করা হয়েছে। খোঁজখবর করে দেখা গেল, অযোধ্যা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে লখনউ পৌঁছোনো যেতে পারে। সেখান থেকে গাড়িতে অযোধ্যা, ফৈজাবাদ ঘণ্টা তিনেকের সফর। তা–ই সই। কিন্তু সরকারের জারি–করা ‘মিডিয়া অ্যাডভাইসরি’ বুঝিয়ে দিল, সে গুড়েও বালি। ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বা রাজ্য সরকারগুলির অ্যাক্রেডিটেড সাংবাদিকেরা এই অনুষ্ঠানের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। এবং উত্তরপ্রদেশের তথ্য দপ্তর নথিভুক্ত সাংবাদিকদের লখনউ থেকে বাসে করে ২২ জানুয়ারির সকালে অযোধ্যা নিয়ে যাবে, সন্ধ্যায় ফের ফিরিয়ে আনবে লখনউয়েই।
সেখানে গিয়ে কি তাঁদের রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে যাওয়া হবে? না, সেখানে তাঁদের সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘প্রবেশ নিষেধ’ বোর্ড। অনুষ্ঠানস্থলে শুধুমাত্র প্রবেশাধিকার দূরদর্শনের। তারাই অনুষ্ঠানের লাইভ সম্প্রচার করবে। এ ছাড়াও সমস্ত টিভি চ্যানেলকে তারাই সেই অনুষ্ঠানের ভিডিও অর্থাৎ ‘ক্লিন ফিড’ দেবে। দূরদর্শন তাদের ক্লিন ফিড দেবে সংবাদ সংস্থা এএনআই–কে। যারা এএনআই–এর গ্রাহক, তারা সেই ক্লিন ফিড ব্যবহার করতে পারবেন, ইত্যাদি সাত–সতেরো। অযোধ্যার রামকথা সংগ্রহালয়ে করা হয়েছে মিডিয়া সেন্টার। লখনউ থেকে সাংবাদিকদের নিয়ে গিয়ে বসানো হবে সেই মিডিয়া সেন্টারে। সেখানেই জায়ান্ট এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে সেই ক্লিন ফিড, অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার। হাতে–হাতে জোগানো হবে প্রেস রিলিজ। দেওয়া হবে আগত ভিভিআইপি অতিথিদের নামের দীর্ঘ তালিকা। থাকবে ঢালাও চা–কফি–স্ন্যাক্সের ব্যবস্থা। থাকবে মধ্যাহ্নভোজের এলাহি ব্যবস্থাও। তবে এদিক–ওদিক ঘোরাঘুরি, খবরের পিছনের খবর খোঁজার, মানুষের মন বোঝার সব রাস্তা থাকবে বন্ধ। সকলকে ফিরতে হবে ওই বাসেই। সাংবাদিকদের বাড়তি পাওনা হবে ‘অযোধ্যা ডেটলাইন থেকে বাইলাইন কপি’।
এর বেশি সাংবাদিকেরা আর কী চাইতে পারে— এটাই বুঝে উঠতে পারছেন না শাসকেরা। দেশ জুড়েই একটা প্রবচন ইদানীং চালু হয়েছে, ‘গদি মিডিয়া’, সরকারের কোলের ওপরে বসে–থাকা মিডিয়া। সরকার–বিরোধিতা, সরকারের সমালোচনা সে–ক্ষেত্রে অবশ্য বর্জ্য। ২২ জানুয়ারির অযোধ্যাও তার ব্যতিক্রম নয়। মনে মনে ঠিক করাই ছিল, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় থাকলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ধারেকাছে নয়, কারণ তার জন্য তো কলকাতার অফিসে বসে টিভি সম্প্রচার দেখা ও সংবাদ সংস্থার পাঠানো খবরই যথেষ্ট। বরং গন্তব্য হবে অযোধ্যা জেলার মধ্যেই, মন্দির থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের ধনিপুর। তিন দশক আগে জনরোষে ধসে–পড়া বাবরি মসজিদের কাঠামোর ওই ‘এক খণ্ড’ জমির বিকল্প হিসেবে সংখ্যালঘুদের সেখানে দেওয়া হয়েছিল পাঁচ একর জমি ও পাঁচ কোটি টাকা। সুপ্রিম কোর্টের সেই সাংবিধানিক বেঞ্চের মহান ‘বদান্যতা’। যে–কোনও কোল–ছাড়া সাংবাদিক জানতে চাইবেন, ২৫ কিলোমিটার দূরের অযোধ্যায় সরকারি অর্থ ও ক্ষমতার সেই দাম্ভিক অনুষ্ঠানকে কীভাবে দেখছেন ধনিপুরের সংখ্যালঘু মানুষ।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যেদিন বাবরি মসজিদ চোখের সামনে ধ্বংস হয়েছিল, সেদিনও সাংবাদিকদের ওপর শাসকের চোখরাঙানি ছিল না। সাংবাদিকদের ওপরে করসেবকদের হামলা হয়েছে। কিন্তু সেই মবোক্র্যাসির সঙ্গে শাসকের অটোক্র্যাসির কোনও তুলনা টানা চলে না। ফলে টানা পাঁচ-সাত ঘণ্টার ধ্বংসলীলার সাক্ষী থাকা সম্ভব হয়েছিল। সকাল থেকে সন্ধ্যা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ-ভারতীয় জনতা পার্টি-বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তাবড় নেতাদের দফায় দফায় ভোলবদল মনে গেঁথে রয়েছে। করসেবক নামক ক্যাডাররা কীভাবে সঙ্ঘ–পরিবারের নেতাদের সেদিন ‘লিড’ করেছিল, তা এখনও জ্বলজ্বলে হয়ে আছে। সেদিন দেখার বা লেখার ওপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়নি।
কিংবা ১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর, যেদিন মুলায়ম সিং যাদব সরকারের নির্দেশে করসেবকদের ওপর গুলি চলেছিল, সেদিনও সাংবাদিকদের ওপরে সরকারের তরফে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়নি। সাংবাদিক–নিগ্রহ হয়তো একাধিক বার হয়েছে, কিন্তু তার পিছনে সরকার ছিল না। এবং সাধারণ ভাবে সাংবাদিকেরা তাকে পেশাগত ঝুঁকি হিসেবেই দেখে থাকেন। কিন্তু এবারে সাংবাদিকদের ওপরে সরাসরি সরকারের অঘোষিত সেন্সরশিপ চাপানো হচ্ছে। সরকারের যুক্তি, ‘নিরাপত্তা’র খাতিরেই এই ব্যবস্থা। এই একটি শব্দ ইদানীং কালে সর্বক্ষেত্রেই সরকার ব্যবহার করছে। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সরকার–বিরোধী বুদ্ধিজীবীদের জেলে ভরা, নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য গোপন করা, নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বিরোধীদের ফোনে আড়ি পাতা। সব, সব এবং সব ক্ষেত্রেই সরকারের মুখের লব্জ এই শব্দটি। এ ব্যাপারে দেশের শীর্ষ আদালতের উষ্মার মুখেও পড়তে হয়েছে সরকারকে। কিন্তু উষ্মাই সার। সুতরাং স্বাধীন ভাবে যদি কাজই না করা যায়, তবে মোদি–যোগী সরকারের এই গাইডেড অযোধ্যা ট্যুরে গিয়ে শাসক যা দেখাবে, তা দেখায় লাভ কী? অতএব ট্রেনের টিকিট বাতিল করাই শ্রেয়। তবু মেলতে হবে ডানা। থমকে গেলে তো চলবে না। বুধবারই চালু হয়েছে অযোধ্যা–কলকাতা উড়ান। সুযোগ নিতে হবে তারই।
বিশেষ খবর
নানান খবর
নানান খবর
এবার থেকে হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস মেসেজকে রূপ দেওয়া যাবে টেক্সটের, কীভাবে ব্যবহার করবেন?...
ভারত-কানাডার কূটনৈতিক উত্তেজনা চড়ছে, এরপর কী হবে...
কোন দেশে পাসপোর্ট বানাতে খরচ সবচেয়ে বেশি? ভারতেই বা খরচ কত? দেখুন হিসাব...
ধাক্কা সামলে ফের নজরে আদানি, রক্তক্ষরণ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াল সেনসেক্সও...
বায়ুদূষণের মধ্যে নতুন রোগ ভয় ধরাচ্ছে দিল্লিতে, চিন্তিত চিকিৎসকরা...
নেপালের এই ব্যক্তি গাইতে পারেন ১৬০টি দেশের জাতীয় সঙ্গীত, শুনলে চমকে যেতে হবে...
সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে ওড়াল আদানি গ্রুপ, বিজেপি বলছে খামোখা মোদিকে বদনামের চেষ্টা...
একসঙ্গে ১৭,০০০ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করল কেন্দ্র, আপনার অ্যাকাউন্ট বিপদে নেই তো? জানুন বিস্তারিত…...
আদিবাসী তরুণীর মুখে মানুষের মল ঢুকিয়ে হেনস্থা, মধ্যযুগীয় নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী থাকল ওড়িশা ...
পিকনিকে হুল্লোড়ের মাঝেই ঘটল বিপত্তি, ঘুরতে গিয়ে ডুবে মৃত্যু তিন পড়ুয়ার ...
ঝাড়খণ্ডে ফিরছেন হেমন্তই? নাকি বাজিমাত হিমন্তের কৌশলে? দু' দফার ভোট শেষে সমীক্ষা বলছে বড় কথা...
আগামী পাঁচ বছর মহারাষ্ট্র কার? ফিরছেন উদ্ধব? হাইভোল্টেজ ভোট শেষে বড় ইঙ্গিত বুথ ফেরত সমীক্ষায়...
দিল্লির মতোই ভয়াবহ হচ্ছে পরিস্থিতি, রাজস্থানের জেলায় জেলায় আতঙ্ক, বড় সিদ্ধান্ত পড়ুয়াদের জন্য...
সিনেমাই এবার বাস্তবে, হারিয়ে যাওয়া বাবাকে কীভাবে খুঁজে পেলেন মেয়েরা শুনলে চমকে উঠবেন...
ভারতের সবথেকে ধীরগতির ট্রেন কোনটি, এই ট্রেনে চড়েছেন আপনিও...